পথের দাবী গল্প থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ গল্পটি পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক সিলেবাস এর অন্তর্গত। এই পথের দাবী গল্পটি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এখান থেকে বেশ কিছু বড় প্রশ্ন ও সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন পরীক্ষায় প্রতি বছরই আসে।

এই লেখাটিতে, পথের দাবী গল্প থেকে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর দেওয়া হল। প্রতিটি প্রশ্নের কোন না কোন বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় এসেছে এবং আগামী বছর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই পথের দাবী গল্পটি ভালো করে পড়ার পর এই প্রশ্নগুলি তোমরা অনুসরণ করতে পারো।

পথের দাবী মাধ্যমিক প্রশ্ন উত্তর

Contents

1. ‘পথের দাবী’ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক উপন্যাস “পথের দাবী”র প্রকাশকাল ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দ। এক অগ্নিদীপ্ত রাজনৈতিক বিপ্লবের পটভূমি নিয়ে রচিত পাঠ্যাংশটি। গল্পটিতে পরাধীন ভারতের মুক্তিপথ সন্ধানের প্রচেষ্টা পরিলক্ষিত হয়েছে। পরাধীন ভারতবর্ষের মুক্তিপিয়াসী যুবসমাজ স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে পথের প্রয়াসী হয়েছিল “পথের দাবী” সেই পথ খোঁজার চিত্রিত রূপায়ন।

গল্পটির প্রেক্ষাপটে রয়েছে ‘পথের দাবী’ নামে একটি সংগঠন। সব্যসাচী এই সংগঠনের বিপ্লবী নেতা। দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রতিনিয়ত প্রাণভয়কে তুচ্ছ করে বিভীষিকাময় অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে এগিয়ে চলেছে সে ব্রিটিশের চোখকে ধুলো দিয়ে। তার কণ্ঠে ধ্বনিত হয়েছে মানবসভ্যতার আদিম দাবি অর্থাৎ স্বাধীনতার দাবি। মিথ্যাচার, ধর্মীয় কুসংস্কার, শাসন,পীড়ন,অত্যাচার,অপমান প্রভৃতি থেকে উত্তরনের দাবি।

এই গল্পে অপূর্বর জ্বালাময়ী সংলাপের মধ্যে দিয়ে দেখানো হয়েছে যে পরাধীন মানুষের মনুষ্যত্বকে পশুত্বের অন্ধকার গিরিগুহা থেকে মুক্তিপ্রদানের চেষ্টা, সেই পথের সন্ধান করাই গল্পের উপজীব্য। এ দাবি শুধু ব্যক্তির একক দাবি নয় , আপামর ভারতবাসীর মুক্তিপথের অনন্য দাবি। পথের দাবী শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বাধীনতার দাবি নয়, এ হল এক নবীন ভারতের দাবি- যার ভিত্তি বন্ধনমুক্ত জীবনের জয়গান।

“পথের দাবী” গল্পে সকলেই জীবনপথের পথিক,তবে প্রত্যেকের নিজস্ব পথের উদ্দেশ্য আছে, তাই তার নাম “পথের দাবী”। এখানে স্বাধীনতা আন্দোলনের পাশাপাশি মানুষের যে নূন্যতম অধিকারকে তুলে ধরা হয়েছে। তাই “পথের দাবী” নামকরণ সার্থক।

2. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোলো আনাই বজায় আছে”- বাবুটি কে? তার সাজসজ্জার বর্ণনা দাও। কে কার উদ্দেশ্যে মন্তব্যটি করেছেন। এমন মন্ত্যব্যের কারণ কি?

কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট‍্যোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী পাঠ্যাংশে বাবুটি হল গিরীশ মহাপাত্র।

বাবুটির মাথার সামনের দিকে বড়ো বড়ো চুল থাকলেও ঘাড় ও কানের দিকে ছোটো করে ছাঁটা চুল।মাথায় চেরা সিঁথি, তেলনিষিক্ত চুল লেবুর গন্ধে ম ম করছে। গায়ে উত্তরীয় ব্যতীত একটি জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের চুড়িদার পাঞ্জাবি,যার বুক পকেটে বাঘ আঁকা রুমাল উঁকি দিচ্ছে। বাবুটির পরনে বিলেতি মিলের কালো মখমল পাড়ের সূক্ষ্ম শাড়ি, হাঁটুর উপরে লাল ফিতে দিয়ে বাঁধা সবুজ রঙের ফুল মোজা। শুকতলায় লোহার নাল বাঁধানো বার্নিশ করা পাম্প শু এবং হাতে হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি।

বর্মা পুলিশ স্টেশনের বড়বাবু নিমাই কথাটি বলেছেন জনৈক বাবু গিরীশ মহাপত্রের উদ্দেশ্যে।

গিরীশ মহাপাত্রের অদ্ভুত রঙচঙে বেশভূষার কারণে নিমাইবাবু এমন মন্ত্যব্য করেছেন।

3. রোগা মুখের অদ্ভুত চোখের দৃষ্টির বর্ণনা দাও। এখানে কার চোখের কথা বলা হয়েছে? গিরীশ মহাপত্রের পকেট থেকে কি পাওয়া যায়?

রোগ মুখের অদ্ভুত দুটি চোখের দৃষ্টির মধ্যে দিয়ে জনৈক বাবুর রহস্যময় চরিত্র ফুটে উঠেছে। দৈহিক দিক থেকে বাবুকে দুর্বল ক্ষীণ প্রাণশক্তির মনে হলেও ওই অদ্ভুত তেজোময় চোখের দীপ্তি দেখে বোঝা যাচ্ছিল যে বাবুটির অন্তরে লুক্কায়িত আছে এমন এক গভীরতা যেখানে খেলা করা চলে না, যেখানে দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হয়। তার প্রানের অন্তঃস্থলে লুকিয়ে রয়েছে তার জিয়নকাঠি, মৃত্যুও যেখানে প্রবেশ করতে সাহস পায় না।

পাঠ্যাংশটিতে বর্মা পুলিশ স্টেশনে নিয়ে আসা সন্দেহজনক ব্যক্তি জনৈক গিরীশ মহাপাত্রের চোখের কথা বলা হয়েছে।

গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে একটা লোহার কম্পাস, মাপ করার কাঠের একটা ফুটরুল, কয়েকটা বিড়ি, একটা দেশলাই ও একটা গাঁজার কল্কে পাওয়া যায়।

4. গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে অপূর্বর পুনরায় কোথায় দেখা হয়েছিল? গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রটি বিশ্লেষন কর।

অমর কথাশিল্পী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পথের দাবী উপন্যাস থেকে গৃহীত পাঠ্যাংশ ‘পথের দাবী’ গল্পে গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে অপূর্বর পুনরায় রেঙ্গুনে স্টেশনে দেখা হয়েছিল।

গিরীশ মহাপাত্র কে প্রথম দেখা যায় রেঙ্গুনে একটি পুলিশ স্টেশনে। বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে তাকে ধরে আনা হয়েছিল। পাঠ্যাংশের গল্প অনুসারে সে বর্মা অয়েল কোম্পানীর তেলের খনিতে কাজ করত। লোকটির পোশাক পরিচ্ছদ অত্যন্ত রঙচঙে, নিম্ন রুচির পরিচয় বহন করে। শরীর স্বাস্থ্য ভগ্নপ্রায়, তবু পোশাক পরিচ্ছদয়ের শখ ষোলোআনা। অপরিচিত কারোর যদি কাজে লাগে তাই সে গাঁজার কল্কে কুড়িয়ে নিজের কাছে রেখেছে। লোকটির বয়ান অনুযায়ী সে খুব ধর্ম ভীরু প্রকৃতির মানুষ,ললাট লিখনে বিশ্বাসী।পাঠ্যাংশটিতে লেখক গিরীশ মহাপাত্র চরিত্রটিকে সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষ রুপে অঙ্কন করলেও লোকটির গভীর রহস্যময় চোখের দৃষ্টির বর্ণনার মধ্যে দিয়ে তার চরিত্রের এক অজানা দিক সম্পর্কে পাঠককে ইঙ্গিত দিয়েছেন।

5. “পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে নিমাইবাবুর সম্মুখে হাজির করা হইল”- পাঠ্যাংশ অনুসারে সব্যসাচী মল্লিক সম্পর্কে কি জানা যায়?তাকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় কি পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েচিল?

পথের দাবী পাঠ্যাংশ অনুসারে জানা যায় যে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক বর্মায় এসেছেন। সব্যসাচী বিজ্ঞান ও চিকিৎসাশাস্ত্রে অসাধারণ পারদর্শী ও একই সঙ্গে বিলাতের ডাক্তার উপাধিধারী। সে বৃটিশ রাজবিদ্রোহী।

পোলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিককে জিজ্ঞাসাবাদের সময় থানায় একটা তামাশার সৃষ্টি হয়েছিল। তাকে থানার বড়বাবুর সামনে নিয়ে আসা হলে জানা যায় যে সে বর্মার অয়েল কোম্পানীর তেলের খনিতে কাজ করত। লোকটির শরীর স্বাস্থ্য ভেঙ্গে পড়লেও পোশাক পরিচ্ছদের বাহার লক্ষ্যণীয়। তাকে তদারক করলে দেখা যায় যে তার কাছে লোহার কম্পাস,কাঠের ফুটরুল,বিড়ি,দেশলাই ও গাঁজার কল্কে রয়েছে। গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তা শুনে , তার সাজপোশাক দেখে সকলেই নিশ্চিত হয় যে গিরীশ মহাপাত্র কখনোই সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না। তাই তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে, খানিকক্ষণ পুলিশ স্টেশনে তার সঙ্গে তামাশা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল।

6. “যাঁকে খুঁজছেন তাঁর কালচরের কথাটা একবার ভেবে দেখুন”-উক্তিটি কে কার সম্পর্কে করেছে? এখানে কাকে খোঁজার কথা বলা হয়েছে?কোন প্রসঙ্গে এই উক্তিটি করেছেন? কালচর বলতে কি বোঝায়?

পথের দাবী গদ্যাংশে এই উক্তিটি অপূর্ব করেছে গিরীশ মহাপাত্র কে লক্ষ্য করে।

এখানে বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিককে খোঁজার কথা বলা হয়েছে।

রেঙ্গুনের পুলিশেরা যাকে হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তিনি একজন বিপ্লবী। সব্যসাচী মল্লিক হলেন সেই বিপ্লবী যিনি কীনা বৃটিশকে নাকে দড়ি দিয়ে ঘোরাচ্ছিলেন। তার চেহারা কখনোই গিরীশ মহাপাত্রের মত ক্ষীণদেহী ও রোগগ্রস্থ হতে পারে না। উপরন্তু গিরীশ যে ধরণের রঙচঙে পোশাক পরিধান করেছিল তা যেকোনো বিলাতফেরত ডাক্তারের পোশাক পরিধানের পরিপন্থী। সর্বোপরি গিরীশ মহাপাত্রের চালচলন, আচার ব্যবহার সবকিছুই অতি সাধারণ নিম্নবিত্ত মানুষকে তুলে ধরছিল পদে পদে তাই এই প্রসঙ্গে অপূর্ব উক্ত উক্তিটি করেছিল।

কালচর বলতে এখানে রুচিবোধের কথা বলা হয়েছে। পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে গিরীশ মহাপাত্রকে ধরে আনা হলেও বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ও গিরীশ মহাপাত্রের চালচলন,আচার ব্যবহার,রুচিবোধের বিস্তর ফারাক। এখানে কালচর বলতে তাই বোঝানো হয়েছে।

পথের দাবী গল্প থেকে এই ছিল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্তর। এইসব প্রশ্ন গুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই গল্প সংক্রান্ত যে তোমাদের কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে নিচের কমেন্ট বক্সে তা লিখে জানাতে পারো।

WebExam Admin

I am an educational blogger with a couple of websites. By profession, I am a school teacher and loves to create & shares study-related content on the internet. I always try to serve you the best and correct information.

This Post Has 2 Comments

  1. Mita Chowdhury

    ভারতী ও সুমিত্রার চরিত্র

  2. Ankan Ghosh

    Thanks. Release more and more paper in free

Leave a Reply