সম্প্রতি, সুপ্রিম কোর্টের একটি যুগান্তকারী রায়ে পশ্চিমবঙ্গে ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) নিয়োগ প্রক্রিয়ার পুরো প্যানেল বাতিল করা হয়েছে। এর ফলে প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী তাদের চাকরি হারিয়েছেন। এই রায় কলকাতা হাইকোর্টের পূর্ববর্তী সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছে, যেখানে নিয়োগে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এই ঘটনা শিক্ষক সমাজে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে এবং অনেকেই এখন ভবিষ্যতের পথ খুঁজছেন। এই নিবন্ধে আমরা চাকরি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা এবং এই পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়ে আলোচনা করব।
Contents
রায়ের প্রেক্ষাপট
২০১৬ সালে এসএসসি-র মাধ্যমে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় ওএমআর শিটে কারচুপি, অতিরিক্ত নিয়োগ, এবং মেধাতালিকায় হেরফেরের মতো গুরুতর অভিযোগ উঠেছিল। ২০২৪ সালে কলকাতা হাইকোর্ট এই নিয়োগ বাতিল করে এবং চাকরিপ্রাপ্তদের বেতন ফেরতের নির্দেশ দেয়। রাজ্য সরকার ও কিছু শিক্ষক এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করলেও, ২০২৫ সালের এপ্রিলে সুপ্রিম কোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখে। আদালত জানিয়েছে, যোগ্য ও অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব নয় বলে পুরো প্যানেলই বাতিল করা হয়েছে। তবে, যারা প্রতারণার মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন, তাদের বেতন ফেরত দিতে হবে, অন্যদের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ প্রযোজ্য নয়।
চাকরি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা
এই রায়ের পর চাকরি ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা সীমিত হলেও কিছু পথ এখনও খোলা রয়েছে:
রিভিউ পিটিশন:
সুপ্রিম কোর্টে রিভিউ পিটিশন দাখিল করা যেতে পারে। তবে, এর সাফল্যের সম্ভাবনা কম, কারণ কেবলমাত্র আইনি বা প্রযুক্তিগত ভুল থাকলেই এটি গ্রহণযোগ্য হয়। শিক্ষকদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা যোগ্য এবং নিয়োগে তাদের কোনও দোষ ছিল না।
নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া:
সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, তিন মাসের মধ্যে নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। যারা আগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন, তারা পুনরায় আবেদন করতে পারবেন। এটি একটি বড় সুযোগ হতে পারে, যদি প্রক্রিয়াটি স্বচ্ছভাবে সম্পন্ন হয়।
রাজ্য সরকারের উদ্যোগ:
রাজ্য সরকার যদি যোগ্য প্রার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করে, যেমন নতুন নীতি বা আইন প্রণয়ন, তবে কিছু স্বস্তি আসতে পারে। তবে, এটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
করণীয় কী?
এই সংকটে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের জন্য কিছু ব্যবহারিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি:
- আইনি সহায়তা:
অভিজ্ঞ আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইনি সম্ভাবনা যাচাই করতে হবে। নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ (পরীক্ষার ফল, নথি) সংরক্ষণ করা উচিত। - সম্মিলিত প্রচেষ্টা:
শিক্ষক সংগঠনগুলোর মাধ্যমে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তোলা যেতে পারে। যোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করার দাবি জোরালো করা প্রয়োজন। - নতুন পরীক্ষার প্রস্তুতি:
আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ার জন্য এখন থেকেই পড়াশোনা শুরু করা উচিত। প্রয়োজনীয় নথি ও যোগ্যতা প্রমাণের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। - বিকল্প পথ:
অনিশ্চয়তার কথা মাথায় রেখে বিকল্প পেশার দিকে নজর দেওয়া যেতে পারে। প্রাইভেট টিউশন, অনলাইন শিক্ষকতা, বা অন্য চাকরির জন্য প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব।
শিক্ষাব্যবস্থায় প্রভাব
এই রায় শিক্ষকদের জন্য বড় ধাক্কা হলেও, দীর্ঘমেয়াদে এটি নিয়োগে স্বচ্ছতা আনতে পারে। তবে, ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাওয়ায় স্কুলগুলোতে শিক্ষক সংকট তৈরি হয়েছে। এটি শিক্ষার মান ও নিয়মিত কার্যক্রমে প্রভাব ফেলতে পারে। রাজ্য সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ এই সংকট মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ।
সুপ্রিম কোর্টের রায়ে চাকরি হারানো শিক্ষকদের জন্য এটি একটি কঠিন সময়। তবে, নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া এবং আইনি পথে এখনও কিছু আশা রয়েছে। এই মুহূর্তে নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণের জন্য প্রস্তুতি, সংগঠিত আন্দোলন এবং বিকল্প পরিকল্পনা গ্রহণই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের পদক্ষেপ। রাজ্য সরকার ও সমাজের সমর্থন এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়ক হতে পারে।